খুলনায় তরুণ চিকিৎসক মুবাশ্বীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে : চিকিৎসায় প্রয়োজন কোটি টাকা

4

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ডা: মুবাশ্বীর হাসান। তিনি নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া ছোট খাল পাড় এলাকার কামরুল ইসলামের একমাত্র পুত্র। আরও দু’টি বোন রয়েছে তার। দেশ ও মানুষের সেবা করার মহৎ উদ্দেশ্যে খেয়ে-না খেয়ে অনেক কষ্ঠে মা-বাবা তাকে মেডিকেলে পড়িয়েছেন। চিকিৎসকও হয়েছেন মুবাশ^ীর। সদ্য ইন্টার্ণী শেষ করে খুলনার একটি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার এবং তার পরিবারকে অন্ধকারের কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছে।
এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন তরুণ ও মেধাবী এই চিকিৎসক মুবাশ^ীর হাসান। সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তার মাথার খুলি (ওপরের সম্পূর্ণ হাঁড়) তুলে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। টানা তিন মাস পর অপারেশন করতে হবে। বর্তমানে খুলনার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন তার চিকিৎসায় গুণতে হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। আর তিন মাস পর অপারেশনসহ সব মিলে তার চিকিৎসায় প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎকরা। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বিপুল অংকের এ অর্থ জোগাড় করা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করলেও তার চিকিৎসার অর্থ সংস্থান হবে না বলে জানিয়েছেন মুবাশ^ীর হাসানের পরিবারের সদস্যরা।
ডা. মুবাশ^ীর হাসানের চাচা মো. শফিকুল ইসলাম (বুলবুল) এ প্রতিবেদককে বলেন, তার বড় ভাইয়ের ছেলে ডা. মুবাশ^ীর হাসানের চিকিৎসায় প্রতিদিন ৬ হাজার টাকা মূল্যের ৩টি করে মোট ১৮ হাজার টাকার ইনজেকশন এবং আইসিইউ ভাড়া বাবদ ৩৫ হাজার টাকা করে ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য খরচ প্রতিদিন তার চিকিৎসায় গুণতে হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। আর তিন মাস পর অপারেশনসহ সব মিলে তার চিকিৎসায় প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎকরা। কিন্তু তাদের পক্ষে এ অর্থ জোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব না। এ কারণে বিপুল এ অর্থ কিভাবে জোগাড় হবে- এ চিন্তায় পরিবারের সদস্যদের ঠিকমত খাওয়া-ঘুমও নেই।
তিনি আরও বলেন, একমাত্র ছেলে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকায় এবং তার চিকিৎসায় বিপুল অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। ফলে তারা কি করবেন- ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তাসহ সরকারিভাবে যদি তার চিকিৎসার দায়িত্বভার নেয়া হয়-তাহলে তারা কৃতজ্ঞ থাকবেন।
ডা. মুবাশ^ীর হাসানের চিকিৎসা সহায়তা দিতে পিতা : কামরুল ইসলাম : ০১৭১৯-১২৪৩২৪ (বিকাশ ও নগদ)। আর ব্যাংকে পাঠাতে চাইলে গউ কঅগজটখ ওঝখঅগ (ঋঅঞঐঊজ), অ/ঈ ৯৯০১১৮০৩৫৮৮৪১–অষ অৎধভধয ইধহশ, খুলনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ডা. মুবাশ^ীর হাসান জুম্মার নামাজ আদায় ও বন্ধুদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। তিনি নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন বায়তুন নূর জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে বের হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এ সময় দ্রুতগামী একটি ইজিবাইক তাকে ধাক্কা দিলে তিনি সড়ক ডিভাইডারের ওপর পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয় মস্তিষ্কে। আশংকাজনক অবস্থায় পথচারীরা তাকে নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুপুরের এ ঘটনার খবর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন বিকেলে। কিন্তু প্রথমে স্বাভাবিক দুর্ঘটনা ভাবলেও চিকিৎসকদের কাছে তার প্রকৃত অবস্থা জানার পর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার পরিবারের সদস্যদের ওপর। পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাকে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে ওই রাতেই নিউরোসার্জন ডাক্তার কমলেশ সাহা অপারেশন সম্পন্ন করেন। তারপর থেকেই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ছেলেকে মেডিকেলে পড়ানোর খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে ডা. মুবাশ^ীর হাসানের পিতা কামরুল ইসলামকে। তার ওপর বর্তমানে তার কোন আয়-রোজগার নেই। স্কুল শিক্ষক বড় মেয়ের যৎ সামান্য উপার্জনেই কোন রকমে চলে তাদের ৫/৬জনের সংসার। এ অবস্থায় স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাসহ সর্বস্ব দিয়ে তিনি ছেলের চিকিৎসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতো বিপুল অর্থের সংস্থান করা পরিবারের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।
ডা. মুবাশ^ীর হাসানের স্বজনরা বলেন, তার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই ব্যয়বহুল। এই অবস্থায় এতো টাকার যোগান দেওয়া তার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা এই সংকটাপন্ন মূহুর্তে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সহযোগিতা করে পরিবারটির পাশে এসে দাঁড়াই। মুবাশ্বীরের মত ডাক্তার রা দেশের সম্পদ, দেশকে এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে তাদের।