খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ১৯৫টি গাছ বিনষ্ট ও বিক্রি : তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

27

স্টাফ রিপোর্টার ঃ
খুলনার তেলিগাতীতে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ১৯৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ উপড়ে ফেলে বিনষ্ট এবং কিছু গাছ বিক্রির অভিযোগের খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (শিক্ষা শাখা) কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বুধবার সকালে তদন্ত কমিটির প্রধান দিঘলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ জাকির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকার জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, স্থানীয় এলাকাবাসী, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেন।


অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সরকারি ১৯৫টি গাছ ভেকু দিয়ে উপড়ে ফেলে সরকারি সম্পদ নষ্টের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিপুরণ চেয়ে খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট গত ১১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের পার্শবর্তি কাজী আরিফুল ইসলাম বুকলসহ গণ স্বাক্ষরকৃত একটি আবেদন করেন এলাকাবাসী। আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে তদন্তের দায়িত্ব পান দিঘলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দিঘলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জাকির হোসেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য জিএম এনামুল কবির, প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা কাজী মঈনুল ইসলাম, খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামান হানিফ, মনির শিকদার, বাবুল হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ ফয়সাল হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রমজান আলী, খানজাহান আলী থানা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মিজানুর রহমান রুপম, অভিযোগকারী কাজী আরিফুল ইসলাম বকুলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলাম বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুলে ধরে অবিলম্বে তাকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রত্যাহারের দাবী তোলেন।
তদন্ত কমিটির কাছে স্তানীয় আ’লীগ নেতা শেখ রমজান আলী বলেন, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমত যা মনে চায় তাই করেন। কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ বরকতুল ইসলাম রাতের আধারে ট্রাকে করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকার লোহার স্ক্রাপ বের করে নিয়ে গেছেন। সম্প্রতি বনবিভাগ কর্তৃক মার্কিং করা ৪৩২টি গাছের মধ্যে অধিকাংশ গাছ ভেকু দিয়ে ফেলে দিয়েছেন, যার মধ্যে মূল্যবান কিছু গাছ বিক্রি করা হয়েছে, আর বেশ কিছু (১৯৫টি) গাছ নষ্ট করে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে। অধ্যক্ষ বরকতুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করেছে। তিনিসহ এ সময় উপস্তিত এলাকাবাসী বনবিভাগের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ নষ্ট হলো, চুরি হলো। অথচ: তাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই। এত কিছুর পরও তাদেরকে ডেকেও পাওয়া যায়না, তাদের কোন খবর নেই।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান দিঘলিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী, অভিযোগকারীসহ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের অভিযোগ শুনেছি, নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
অপরদিকে, অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের সরকারি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মঈনুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মেরে লাশ গুম করে ফেলার হুমকির অভিযোগে গত ৩ অক্টোবর খুলনার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ‘‘ক’’ অঞ্চলে মামলা দায়ের করা হয়। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার গাড়ী চালক আমিনুল সরদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারিরিকভাবে লঞ্চিত করা, গাড়ীর কাজ না করিয়ে ভাউচার করে সমন্বয় করার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র মহাপরিচালকের বরাবর লিখিত অভিযোগও প্রেরণ করেছেন গাড়ী চালক আমিনুল সরদার।