নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সরকারের সমালোচক ও ভিন্নমতের লোকজন নিরাপত্তাবাহিনীর রোষানলে পড়ছে। সে কারনে নিরাপত্তাবাহিনীর বেআইনী কর্মকান্ডকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গুম, হেফাজতে নির্যাতনসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
‘নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বুধবার খুলনায় অনুষ্ঠিত র্যালি ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক, খুলনা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল ১০টায় নগরীর ফুল মার্কেট মোড় থেকে র্যালি বের হয়ে জাতিসংঘ পার্কের প্রধান ফটকের সামনে খানজাহান আলী সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে গৃহবধূ আফরোজা বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরে বক্তারা আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে আটকাবস্থায় নির্যাতন, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এই ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্যাতনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি চালু থাকার কারণেই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত থানা, বিভিন্ন ঘোষিত এবং অঘোষিত ডিটেনশন সেন্টার এবং কারাগারে মানুষ নির্যাতন ও অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণের শিকার হচ্ছেন। যদিও আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী কোনো ডিটেনশন সেন্টার, কারাগার বা হাজতখানায় কোন অজুহাতেই কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক কিংবা মর্যাদাহানিকর আচরণ করা বা শাস্তি দেয়া যাবে না। এমনকি নির্যাতনকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর দেশে “নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন পাশ হয়। কিন্তু তারপরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে নির্যাতন এবং নির্যাতনের কারণে মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার এর অপশনাল প্রোটোকল অনুমোদন এবং ২০১৩ সালে গৃহীত নির্যাতন বিরোধী আইনের বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক কাজী মোতাহার রহমান বাবু। দিবসের বিবৃতি পড়ে শোনান নিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক জিয়াউস সাদাত। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন কর্মী রেহানা আখতার, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জেলা কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, নাগরিক নেতা শেখ আব্দুল হালিম, গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, নিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, সাংবাদিক শেখ হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক এম এ আজিম, সাংবাদিক মো. জামাল হোসেন, সাংবাদিক এম সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, সমাজকর্মী মো. সাখাওয়াত হোসেন স্বপন, ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান, মো. নজরুল ইসলাম, ভিকটিম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহাজালাল হাওলাদার, শাহজালালের স্ত্রী রাহিলা বেগম, শিক্ষক সাকিব হাসান, কলেজ শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম, মো. সালমান হাসান নিপু ও তন্নী আক্তার প্রমুখ।