কুস্টিয়ার খোকসায় মেম্বারের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতার নামে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগ

260
আরিফুর রহমান সেতু এবং রনি মজুমদার কুস্টিয়া থেকে
কুস্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের স্ত্রী হালিমা খাতুনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে তার জমি ও দোকান নিজের নামে লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য (মেম্বার) আব্দুস সামাদ সান্টুর বিরুদ্ধে। জমি ও দোকান ফিরে পেতে এখন সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা হালিমা খাতুন (৭২)। গোপগ্রাম ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ সান্টু খোকসা উপজেলার গোপগ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।
ইউপি সদস্য সান্টু আগে বিএনপি নেতা ছিলেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে চলেন সান্টু। বৃদ্ধার প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা হালিমা খাতুন চার সন্তানের জননী। তার স্বামী অনেক বছর আগে মারা যায়। কিছুদিন আগে তার ছেলে মন্টু মারা যায়। ছেলের মৃত্যুর পর ছেলের নামে থাকা জমির ছয় ভাগের এক ভাগের মালিক হন হালিমা খাতুন। বৃদ্ধা হালিমা খাতুনের গোপগ্রাম বাজারে একটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানের ভাড়া নিয়ে মৃত ছেলের তিন মেয়ে, দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে সংসার চালান। দোকান ভাড়ার টাকা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। কিন্তু তাদের সেই দোকান ও জমি হাতিয়ে নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ সান্টু। কয়েকদিন আগে বৃদ্ধা হালিমা খাতুনকে ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে সেই দোকান ও জমি নিজের নামে লিখে নেন সান্টু মেম্বার। জানতে চাইলে কাঁদতে কাঁদতে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা হালিমা খাতুন বলেন, ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আমার সব কিছু নিজের নামে লিখে নিয়েছেন সান্টু মেম্বার। আমি আমার জমি ও দোকান ফেরত চাই। সান্টু মেম্বারের বিচার চাই।
কীভাবে বুঝলেন জমি লিখে নিয়েছেন সান্টু মেম্বার এমন প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধা হালিমা খাতুন বলেন, আমি দোকানের ভাড়া তুলতে গেলে সান্টু মেম্বার বলে তোমার তো এখন আর দোকান নেই। এই দোকান এখন আমার। তুমি আমার কাছে দোকান ও জমি বিক্রি করে দিয়েছ। স্থানীয় সূত্র জানায়, বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকা তোলার কথা বলে গত ১০ জুলাই খোকসা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বৃদ্ধাকে নিয়ে জমির দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে নেন সান্টু মেম্বার।
মৃত মন্টুর স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, আমার চার সন্তান। সন্তান ও শাশুড়ি হালিমা খাতুনকে নিয়ে দোকান ভাড়ার টাকায় সংসার চালাতাম। বেশ কিছুদিন ধরে ভাড়াটিয়া আলতাব হোসেন দোকানের ভাড়া দেয় না। আমরা ভাড়া চাইতে গেলে বলে দোকান এবং জমি এখন আর তোমাদের নেই। ইউপি সদস্য সান্টু দোকান ভাড়া দাবি করেছেন, দোকান এবং জমি এখন তার। তোমার শাশুড়ি সবকিছু মেম্বারের নামে লিখে দিয়েছেন।
মৃত মন্টুর চাচা আব্দুল হাই বলেন, সান্টু মেম্বার আমার ভাবি হালিমার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ১১ দাগে প্রায় দুই শতাংশ জমি লিখে নিয়েছেন। এখন আলতাব ও সান্টু মেম্বার ১১ দাগের জমি একই দাগে দেখিয়ে তিনটি দোকান দখল করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা। বয়স্ক ভাতার টাকা তোলার কথা বলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে আমার ভাবির জমি ও দোকান দখল করে নিয়েছেন সল্টু মেম্বার।
এদিকে, এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে ওই এলাকার মানুষ। কিন্তু ইউপি সদস্য সান্টু প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। স্থানীয় সমিল ব্যবসায়ী ইউসুফ মোল্লা বলেন, গোপগ্রাম ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুস সামাদ সান্টু প্রতারক। ওই বৃদ্ধা মহিলা অসহায়, খুবই ভালো মানুষ হওয়ায় প্রতারণা করে তাদের জমি ও দোকান লিখে নিয়েছেন সান্টু মেম্বার। সান্টু মেম্বার বিভিন্ন সময় সালিশের নামে বিভিন্ন মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোপগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর cintv24 এর প্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে জানান এ বিষয়ে এখন খোকসা থানায় আছি।  আপনাদেরকে পরে এই বিষয়ে জানানো হবে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ সান্টু এর সাথে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। সান্টু মেম্বারের ছোট ভাই মুঠোফোনে cintv24  কে জানান তার ভাইকে থানায় নিয়ে যাবার পর আর কোন সংবাদ পাওয়া যায় নি।
এ ব্যাপারে  খোকসা থানার ওসির সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি প্রথমে জানান সান্টু  মেম্বরের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আসেনি এবং তাকে গ্রেফতার বা থানায় আনা হয়নি। পরবর্তীতে এ প্রতিবেদক পুনরায় ফোনে কথা বললে ওসি মেম্বরের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা ও থানায় নিয়ে আসার বিষয়টি স্বীকার করেন। একাধিক সূত্রে জানায়, রাতে ওই ইউপি সদস্যর কে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য একটি চক্র  মোটা অংকের টাকা নিয়ে থানায়  লেনদেন দরবার করতে যায়। ওসির রহস্যজনক ভূমিকার অবসান ঘটে একের পর এক গণমাধ্যমকর্মীর ফোনে তথ্য জানতে চাইলে। (চলবে)