সরকারের আদেশ ডোন্ট কেয়ার, অবশেষে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের ১৫৮ ক্লিনিক বন্ধ

1143

মো. আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট।

“বাংলাদেশের মধ্যে একটি মিনি বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। মতিনের রাজ্যে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের আইন চলে না। সেখানে তারা যেভাবে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক চালাবে , সেভাবেই চলবে” এমন মন্তব্য করেছেন সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের চাকরি থেকে সদ্য ছাটাইপ্রাপ্ত কিছু কর্মী। এ মন্তব্যের পিছনের রয়েছি কি বড় কোন কারণ ? তবে অনুসন্ধান রিপোর্টে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সারাদেশে যখন করোনা বিপর্যয়ে ঠিক তখনই সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক কোম্পানী তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন ১৫৮ টি ক্লিনিক বন্ধের ঘোষনা দেয়। ওই বন্ধের তালিকায় থাকা ক্লিনিকগুলোর প্রায় ২ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়ে। শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন। কখনও করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মানবন্ধন, আবার কখনও জেলা প্রশাসককে স্মারক লিপি প্রদান করেন আন্দোলনরত কর্মীরা।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থেকে কিছুটা আশ্বাসের বানী শোনান  খোদ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এর সচিব মো. আলী নূর । সচিবের নির্দেশনামতে পরিচালক পরিকল্পনা ও লাইন ডাইরেক্টর সেলিনা আক্তারের এক স্বাক্ষরিত চিঠিতে গত ২০ মে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের  চেয়ারম্যান কর্তৃক বন্ধ ঘোষিত ক্লিনিকগুলো চালানোর জন্য অবহিত করেন। তবে সরকারি ওই চিঠিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক তাদের ওই ১৫৮টি ক্লিনিক বন্ধের বিষয় অটুট থাকে। চলতে থাকে ক্লিনিকগুলো থেকে মালামাল হস্তান্তর প্রক্রিয়া।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দেশের ৩৯৯টি থানা এলাকায় সূর্যের হাসি ক্লিনিক গুলো ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহায়তায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। তবে ২০১৮ সালে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক কোম্পানী ক্লিনিকগুলো পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০২২ সাল মেয়াদ পর্যন্ত। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিকে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের ফিল্ড পর্যায়ের কর্মীদের নানা রকম আকাশ কুসুম প্রতিশ্রুতি দেয়। বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রনাধীন ক্লিনিকগুলোর কর্মরতদের খন্ডকালীন নিয়োগপত্র দেয়। নিয়োগপত্রে কখনও ১১ মাস কখনও ৪ মাস আবার কখনও ২মাসের জন্য দেওয়া হয়। মোট তিনবার নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। শুরু হয় নানা রহস্যের কল্প কাহিনী। এর মধ্যে সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ ক্লিনিক বন্ধের হুঁশিয়ারী দিতে থাকে। প্রথম দিকে ৭৪ টি ক্লিনিক বন্ধ করেও দেয়। এ তথ্যটি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী। ওই কর্মী আরও জানান, ক্লিনিকগুলোতে উপর মহলের বিভিন্ন চাপ আসতে থাকে। প্রতিটি ক্লিনিকে মাসিক আয়ের পরিমাণের লক্ষ্যমাত্রা দ্বীগুণ করে। যেখানে মা ও শিশুদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা অথচ চড়া মূল্যে সেবা দিতে উপর থেকে বার বার বলা হয়। এই হলো সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের পূর্বের হালহকিত।

বর্তমানে সূর্যেরহাসি নেটওয়ার্ক ক্লিনিক গুলো ছাটাইকৃত প্রায় ২ হাজার কর্মী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনের তাগিদে , চাকরি বাঁচাতে এবং ক্লিনিক বাঁচাতে কর্মীরা ছুটে যাচ্ছেন দুয়ারে দুয়ারে। করোনা বিপর্যয়ের কারণে পারছেনা বড় কোন আন্দোলনে  যেতে। সরকার প্রধানের কাছে স্মারক লিপি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন ফল পাননি ছাটাইকৃত কর্মীরা। তাই বাধ্য হয়ে দেশের সর্বচ্চ আদালতের দারস্থ হচ্ছেন বলে জানান সূর্যের হাসি  নেটওয়ার্কের শাহ আলম সাগর নামে এক কর্মী।

এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনরত কর্মীদের সভাপতি রবিউল ইসলাম (ক্লিনিক ম্যানেজার) জানান, “দেয়ালে পিঠ ঠেকে  গেলে আমরা তখন আর করোনা বিপর্যয় মানব না। আমরা কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষনা দিব। তাই সূর্যেরহাসি নেটওয়ার্কের কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন করোনা দূর্যোগকালীন আমাদের বেকারত্মের অভিশাপে ঠেলে দিবেন না, অচীরেই বন্ধ ক্লিনিকগুলো চালুর ঘোষনা দিন।”

সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী  আব্দুল মতিনের ব্যবহারিত মুঠো ফোন নম্বর ০১৭১৭ ১৭—–০১ নম্বরে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও লাইন ডাইরেক্টর) সেলিনা আক্তার জানান, আমরা সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ককে ১৫৮ টি ক্লিনিক চালানোর জন্য অবহিত করেছি। তারা যদি আমাদের বিষয়টি অনুসরন না করে তবে প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নিব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে কোন জবাব বা চিঠি পায়নি।

বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সর্বশেষ ভরসার স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আর্কষণ করার জন্য প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচি দিবেন বলে আন্দোলনরতরা এ প্রতিবেদককে জানান। তবে আন্দোলনের ভাষা যেটাই হোক না কেন,  ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকলে কর্মরত ২হাজার কর্মীদের পরিবারের প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার সদস্য করোনা রোগে নয় বরং না খেয়েই মারা যাবে , যদি তাদের পরিবারের অর্থ উপার্জনের সেই ব্যক্তির চাকরি-ই না থাকে। তাই মানবিক বিবেচনার দিকে লক্ষ রেখে সরকারের এখনই সূর্যের হাসি নেটওয়ার্কের ১৫৮টি ক্লিনিক যাতে বন্ধ না হয় দিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন সচেতন মহল।