গোপালগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, পুরুষশূন্য নিজড়া গ্রাম

1860

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট

গোপালগঞ্জের  সবজু শ্যামল গ্রাম পশ্চিম নিজড়া। গ্রামটিতে দেশ স্বাধীনের পর  থেকেই  একক ক্ষমতার মসনদে বসার জন্য চলে আসছে নানা দ্বন্দ।  প্রায় ৩ যুগের বেশি সময়ে ধরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম নিজড়া গ্রামে কয়েকটি বংশের মধ্যে চলছে ক্ষমতার লড়াই। সেই ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে অনেক সময় বেধেঁছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। জানাযায়, ১৩নং পশ্চিম নিজড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকদফা সরদার বংশ ও মিনা বংশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘটে। দীর্ঘদিন মরহুম কিরামত আলী মিনা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন । কয়েকদফা দায়িত্বে থাকার পর এবং কিরামত মীনার মৃত্যুতে মীনা বংশের নতুন চেয়ারম্যান হলেন মুকুল মিনা।

স্থানীয়রা জানান, পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকা সরদার রবিউল ইসলাম রবি দেশে ফিরে এসে ২০১১ সালে নিজড়া ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করে বিপুলভোটে বিজয় লাভ করেন। এর পর থেকে শুরু হয় ওই গ্রামে নেতৃত্বের দ্বন্দ। কারণ দীর্ঘ দিন যাবৎ মিনা বংশ, খাঁ বংশ ও শেখ বংশ ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিল। একবারে নতুন মুখ হিসেবে সরদার বংশের একমাত্র প্রার্থী রবিউল ইসলামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। নিয়তির পরিহাস হিসেবে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ৩ মাস পর সরদার রবিউল ইসলাম সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন। এরপরও সরদার বংশ চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েনি। নিহত রবিউলের ছোট ভাই সরদার আজিজুর রহমান উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনিও নির্বাচিত হন। সেই থেকেই সরদার আজিজ চেয়ারম্যান হিসেবে পশ্চিম নিজড়াই পরপর দুইবার  দায়িত্বে রয়েছেন। সরদার বংশের এই দীর্ঘ দিনের অঘোষিত ক্ষমতা মীনা বংশ কখনও মেনে নিতে পারেনি। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে মীনা বংশ সহ কয়েকটি বংশ একত্রিত হয় সরদার বংশের বিপক্ষে ।

এরই অংশ হিসেবে গত ২৫ জুন জাঙ্গাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মীনা বংশ  ও সরদার বংশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায় ১৫ জন আহত হয়। তবে আহতদের কয়েকজনকে গোপালগঞ্চ সদর হাসপাতালে  চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন সরদার মিলন (৩০)। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিলনের অবস্থা আশংকাজনক।

এ ব্যাপারে কথা হয় গোপালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মনিরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, সংর্ঘষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের উপরেও হামলা চালানো হয়। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ থানায় নাম উল্লেখপূর্বক ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং অজ্ঞাত আসামী করা হয় ২ থেকে ৩শ জনকে।

১৩ নং পশ্চিম নিজড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার আজিজ জানান, পুলিশের উপর কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে একটি মহলের উস্কানী ও ইন্দনে ফলে বিষয়টি তীব্র আকার ধারন করেছে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ফুটবলা খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে সরদার বংশের উপর পূর্ব পরিকল্পিত হামলা চালোনার একটি নীল নকশা। দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রতিপক্ষের আধিপত্য বিস্তার করতে না পেরে তারা একের পর এক ষড়যন্ত্রের ছক একে যাচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশের এই লাগামহীন অজ্ঞাত আসামির তালিকার যাতাকলে অনেকেই আতংকে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। এমনকি অনেক নিরীহ মানুষও মামলার জালে ফেসে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।