দীর্ঘ ২৩ দিনেও তদন্ত শেষ হয়নি : কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুলের ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েও নিরব কর্তৃপক্ষ

217

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট
স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একের পর এক ধরা পড়ছে দূর্নীতির শীর্ষে থাকা রাঘব বোয়াল। তারপরেও যেন কোন মতে থামাছে না দূর্নীতির স্রোত। প্রতিদিনই পত্রিকা বা টিভির স্ক্রীনে নতুন নতুন দূর্নীতির মহা-নায়কদের দেখা মিলছে। তেমনি একজন দূর্নীতি পরায়ন ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। তিনি খুলনার ফুলতলা উপজেলা শাখা কৃষি ব্যাংকের লোন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল ঘুষ গ্রহণের সময় সংবাদকর্মীদের ক্যামেরায় ধরা পড়েন। বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিভাগীয় কৃষি ব্যাংকের জিএম শফিউল আজম তাৎক্ষনিক তদন্তে মাঠে নামেন। ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয় । তবে দীর্ঘ ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান কোন শাস্তি আমিনুল পায়নি । এদিকে খুলনা কৃষি ব্যাংকের ডিজিএম (ডেপুটি মহা-ব্যবস্থাপক) মোঃ কাইয়ুম লোন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের বিষয় শিথীলতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
সরেজমিনে অনুসন্ধানীতে জানাযায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কোমরাইল গ্রামের মৃত: মেহের সরদারের পূত্র আমিনুল ইসলাম। তবে সারা গ্রাম জুড়ে নজরুল ইসলাম নামে পরিচিত আমিনুল। ফুলতলা কৃষি ব্যাংক শাখায় আমিনুল যোগদানের পর থেকে সদ্য বদলি হওয়া ব্যাংক ম্যানেজার মুস্তাফিজুর রহমানের যোগসাজসে অনিয়মের বিপ্লব ঘটান। লোন পাশ হলেই ১০% হারে গ্রাহকদের দিতে হবে মুস্তাফিজ ও আমিনুল কমিশন। এ কমিশন না দিলে হুমকি ধামকি সহ নানা প্যাচ কষতে থাকে ওই দুই ব্যাংক কর্মকর্তা। বাধ্য হয়ে অনেকেই তাদের খোপ্পরে পড়ে টাকা দেয়। এখানেই শেষ নয়। এরকম শতশত অভিযোগ আসতে শুরু করে।


বরনপাড়া গ্রামের সিদ্দিক সরদারের পূত্র মফিজুর রহমান জানান,“ ফুলতলা কৃষি ব্যাংকে ৪ লাখ টাকা লোনের জন্য আবেদন করেছিলাম। আমিনুল তো লোন দিবেই না। আমার কাগজ ফেলায় দিয়েছিল, পরে একজনকে দিয়ে সুপারিশ করার পরেও ২মাস লোনের জন্য ঘুরায়ছে। একপর্যায় আড়াই লাখ টাকা লোনের জন্য ১১ হাজার টাকা নিয়েছে আমিনুল নিজে হাতে । এ বিষয় ম্যানেজার মুস্তাফিজকে বললেও কোন কাজ হয়নি ।
পথেরবাজারে সেলুনে কাজ করেন সুকরঞ্জন। অনেকেই তাকে সাধু দা বলে চিনেন। তার কাছেও ২০ হাজার টাকা দাবি করে আমিনুল।
মশিয়ালী গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জেল গাজী। পেশায় একজন কৃষক। কৃষি কাজের জন্য আড়াই লাখ টাকা লোনের আবেদন করলে ২০ হাজার টাকা আমিনুল হাতিয়ে নেয়।
পাড়িয়ারডাঙ্গা, বরণপাড়া, মশিয়ালী সহ পুরো আটরা শিল্পাঞ্চলের অলিতে গলিতে কয়েকশত গ্রাহক রয়েছেন। যারা লোনের আবেদন করেছেন বা লোন পেয়েছেন তাদের প্রত্যেককে আমিনুল-মুস্তাফিজ কমিশন বাধ্যতামূলক দিতে হয়েছে। বিষয়টি অদ্ভুত লাগলেও এটাই বাস্তব। পুরো ফুলতলা উপজেলার মানুষ জানেন কৃষি ব্যাংকের এ শাখা থেকে লোন নিতে গেলে আমিনুল-মুস্তাফিজ কমিশন দিতেই হবে। না হলে সকাল থেকে সন্ধ্যা কৃষি ব্যাংকের সিড়ি গুনে যেতে হবে ।
সরেজমিনে আরো গিয়ে দেখা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফুলতলা কৃষি ব্যাংক শাখার পাশের গলিতে লোন গ্রহীতা মোফাজ্জেল গাজীর ছেলে মিজানুর গাজীর কাছ থেকে ঘুষের ২০ হাজার টাকা গুণে নিচ্ছেন আমিনুল ইসলাম । গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ভোঁ-দৌড় দেন আমিনুল। তবে সৌভাগ্যক্রমে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ধারণ হয় এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায়।
পুরো ঘটনাটি বর্ণনা সাপেক্ষে সচিত্রভিডিও সহ অন্যান্য প্রমাণাদি খুলনা বিভাগীয় কৃষি ব্যাংকের জিএম শফিউল আজমের কাছে জমা দিলে, তিনি তাৎক্ষনিক তদন্তে মাঠে নামেন। এর পর ওই মহা-ব্যবস্থাপক খুলনা বিভাগীয় শাখার ডিজিএম কাইয়ুম এবং এসপিও আব্দুল জলিলকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এর পর দফায় দফায় ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মূখীন করেন ডিজিএম কাইয়ুম। আলমগীর গাজী নিজে জিএম বরাবর তাঁর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেও আলমগীরকে কয়েকবার তলব করা হয় কৃষি ব্যাংকে। এ যেন ভাগ্যের বিড়াম্বনা। মনে হয় অভিযোগ করেই বিপদে পড়লেন কৃষক আলমগীর। অনেকটা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার মত প্রশ্ন করতে থাকে ডিজিএম কাইয়ুম। তবে খোস মেজাজে চাকরি করে যাচ্ছেন ঘুষ কেলেংকারীর সাথে জড়িত আমিনুল। তাকে শুধু সাতক্ষীরা কৃষি ব্যাংকে বদলি করেই যেন দায়মুক্তি নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সরকার যেখানে দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। সেখানে আমিনুলের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও ও বিভিন্ন কল রেকর্ড পেয়েও এখন পর্যন্ত কোন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডেপুটি মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কাইয়ুম জানান, আমিনুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানবাধিকার কর্মী শেখ মামুন জানান, ঘুষ গ্রহণের সচিত্র প্রমাণ ও ভয়েস কল রেকর্ড পাওয়ার পরেও যখন আমিনুলের বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ নেননি। সেখানে অন্যান্য অসাধু কর্মকর্তারা দূর্নীতি করতে আরো উৎসাহ পাবে।
সর্বশেষ আমিনুলের ক্ষোপ্পরে পড়া ভুক্তভোগী লোন গ্রহীতারা কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আমিনুলের প্রতি এ ধরনের উদাশীনতা দেখে হতাশ হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সরনাপন্ন হয়েছেন বলে জানাযায়। দীর্ঘ ২৩ দিনেও যখন আমিনুল এর মত অসাধু কর্মকর্তাদের যখন কঠোর শাস্তির বদলে সামান্য বদলি হয়ে ক্ষ্যান্ত হন কর্তৃপক্ষ,সেখানে কিভাবে বাংলাদেশ দূর্নীতি মুক্ত হবে এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। তাই এখন শুধু আমিনুল নয় । বরং আমিনুলের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন পুরো ফুলতলাবাসি।