||অনুসন্ধানী ১|| খুলনার কর অফিসের কর্মচারি ইফতেখার ও মুক্তার দূর্নীতির সাতকাহন

741

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট
খুলনার কর অফিসের স্টেনো গ্রাফার ইফতেখার ও মুক্তার দূর্নীতির সাতকাহন বেরিয়ে এসেছে। তবে এসব দূর্নীতি বা অনিয়মের নেপথ্যে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে নড়েচরে বসলেও নেপথ্যের কারিগররা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
খুলনার মুজগুন্নী রাফাজি ম্যানশনে অবস্থিত কর অঞ্চল অফিস ভবন ২ এর কার্যালয়। এখানে বেশ কয়েকটি সার্কেল অফিস রয়েছে। পুরো ভবনটি সাজানো গোছাল রয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করলে দেখে মনে হবে কোন প্রাইভেট কোম্পানীর কার্যালয়। বেশির ভাগ সময় শুনশান নিরব থাকে এ আয়কর ভবন। তবে নিরবে ও নিভৃতে চলে নানা অনিয়মের দৃশ্য। বেশ কিছুদিন যাবৎ এ ভবনের সার্কেল (০৫)এ দূর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ আসতে শুরু করে। একটি ভয়েস কল রেকর্ডের সূত্র ধরে চলতে থাকে আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম।
গত ১২ অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, সার্কেল ৫ এর স্টেনো গ্রাফার ইফতেখার কম্পিউটারে কাজ করে যাচেছন। অন্যদিকে সুপারভাইজার শেখ রাসেল ও অফিস সহায়ক মুক্তা দাপ্তরিক ফাইলপত্র নিয়ে সহকারি কর কমিশনার হেদায়েতের কক্ষে আসা যাওয়া করছে। প্রথম দিকে মনে হয় পুরো অফিসই নিয়মের মধ্যে চলছে। বেলা ১২টার দিকে একজন ব্যাক্তি আসেন টিন সার্টিফিকেট খোলার জন্য। স্টেনো গ্রাফার ইফতেখার ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টিন সার্টিফিকেট খুলতে ১ হাজার টাকা দাবি করেন। তবে কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ওই ব্যক্তি টিন সার্টিফিকেটের জন্য ৫শ টাকা দেন ওই স্টেনোগ্রাফারকে। এখানেই দূর্নীতির শেষ নয়, পরদিন অর্থাৎ ১৩ অক্টোবর অফিস সহায়ক মুক্তার কাছে হান্নান নামে এক ব্যক্তি যান আয়কর সার্টিফিকেট আনার জন্য। তবে সার্টিফিকেট আনতে গেলে মুক্তাকে ১ হাজার টাকা গুণতে হয়। এ হাজার টাকার ভাগ যাবে স্টেনোগ্রাফার ইফতেখারের কাছে, সুপারভাইজার রাসেল ও সহকারি কর কমিশনার হেদায়েতের পকেটে। এমন তথ্য জানিয়েছেন অফিস সহয়াক মুক্তা।
ঘুষ বাণিজ্যের সাথে জড়িত মুক্তা ও ইফতেখারকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তারা অকপটেই তাদের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে সুপারভাইজার শেখ রাসেল বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য বেশ তদবির শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত কোন তদবিরে কাজ হলো না। তবে এ সার্কেল অফিসে নানা অনিয়মের প্রধান সমন্বয়কারি শেখ রাসেল । এ তথ্য পাওয়া যায় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে। ওই সূত্রটি আরো জানান, রাসেল এখানে সুপারভাইজার হিসেবে যোগদানের পর থেকে অনিয়মের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। রাসেল বিভিন্ন সময় ক্ষমতাশীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে আসছে। যার ফলে অনেক সেবা প্রত্যাশী, কতিপয় আয়কর আইনজীবি রাসেলের ক্ষমতার দাপটে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
এবার আসাযাক সহকারি কর কমিশনার হেদায়েতের হাল হকিকতের দিকে। তার চাকরি আর মাত্র কয়েকমাস বাকি রয়েছে। অফিস সহায়ক মুক্তার একটি কল রেকর্ডে স্পষ্টভাবে বোঝাযায় হেদায়েত অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছে কি না! তবে বিভিন্ন রহস্যজনক প্রশ্ন দেখা দেয় এ সহকারি কমিশনারের দাপ্তরিক কার্যক্রম দেখে। এদিকে ইফতেখার ও মুক্তার ঘুষ কেলেংকারাী চাপা দেওয়ার জন্য তিনিও মাঠে নামেন। আর আই-ওয়াশ করতে ও নিজের চেয়ার নিরাপদে রাখতে তাৎক্ষনিক ইফতেখার ও মুক্তাকে কারণদর্শানোর নোটিশ প্রদান করতে ভুলে যায়নি সহকারি কর কমিশনার হেদায়েত।
খুলনার কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায় জানান, দূর্নীতির বিষয় আমরা জিরো টলারেন্স। ইফতেখার ও মুক্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শুধু মুক্তা বা ইফতেখার ঘুষ দূর্ণীতির মূল হোতা নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এ অফিসের অনিয়মের সাথে জড়িত আরো রাঘব বোয়ালদের নামের তালিকা। তাই দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শুধু ইফতেখার ও মুক্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হবে না, বরং মূল হোতাদের চিহ্নিত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান সচেতন মহল।
(কর অফিসের দূর্নীতির মূল হোতাদের ফিরিস্তি নিয়ে আগামী প্রতিবেদন আসছে………….)