নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো এখনো ঠিক হয়নি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

385

 

আসন্ন জাতীয়   সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কোনো পরামর্শ দেননি। বরং তারা চান, আগামীতেও যেন আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসুক এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোক। বিদেশিদের সাহায্য-সমর্থনের ওপর আমারা নির্বাচনে জয়লাভ করিনা না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  বুধবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেই সব বিষয় তুলে ধরেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
নির্বাচনকালীন সরকারের কোন কাঠামো বা পরিধি এখনো ঠিক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আ’লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছি। আরও আলোচনার বিষয় আছে। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র নায়কদের কাছেও এ বিষয়ে পরামর্শ নিয়েছি। এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনার বিষয় রয়েছে। সকলের পরামর্শের আলোকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি অনুরোধ করেছেন আমাকে নির্বাচনে সমর্থন না দেওয়ার জন্য। এটা তো বিএনপিসহ অনেকেই করে আসছে। কারা কাকে সমর্থন না দিতে অনুরোধ করেছে, সেটা তো আমাদের দেখার বিষয়।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মানুষের ভোট দেওয়ার বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি কিন্তু ইভিএমের পক্ষে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো ডিজিটাল যুগ। তাই আমি ইভিএমে কোনো সমস্যা দেখি না। তবে আগে ইভিএম হোক। আমরা এটি কেনার জন্য একনেকে পাস করে দিয়েছি। ইভিএম হোক এটি নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। এটা জনগণের ভোটের বিষয়কে সহজ করে দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। অন্যায়টা কি করেছি যে, এখনই পদত্যাগ করতে হবে। দিন বদল কি হয়নি, চিকিৎসা, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন হয়নি? সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমার টার্গেট ছিল টানা দুই বার ক্ষমতায় থাকা। আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। এখন ক্ষমতায় না থাকলেও আমার কোন অসুবিধা নেই।
সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সবাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতিতে বিশ্বাস করে। যারা এটি নষ্ট করতে চায় তারা বিকৃত মানুষিকতার লোক। এদের ঠেকাতে সামাজিক সচেতনতা ও জনগণকে এগিয়ে আসা দরকার। সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে যাতে কারো কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ কোনো নোংরামী করতে না পারে। এমনকি কেউ যেনো কোনো কিছু নিয়ে সামাজিক সন্ত্রাস তৈরি করতে না পারে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। কিছু তারা ফেরত নিয়েছে, বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে  বৈঠককালে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কেউ আমাকে কোনো পরামর্শ দেয়নি। বরং যাদের সাথে কথা বলেছি, তারাই আমাকে উইশ করেছে যেন আমি আবার ক্ষমতায় আসি। তাই জনগণ ভোট দিলে আছি, না হলে নাই। সবাই আন্তরিকভাবে চেয়েছে যেন আবার আমরা ক্ষমতায় আসি।
আগামীতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না এবং কেমন ষড়যন্ত্র মনে করছেন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের একটি উর্বর ভূমি। এখানে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়েছে। গত সাড়ে ৯ বছর আমরা ক্ষমতায়। অনেক উন্নয়ন করেছি। কিন্তু এমন কী করেছি যে কারণে আমাদের রিজাইন দিতে হবে, ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা চিন্তা করে সরকার পড়ে যাবে, সরকার উৎখাত হবে আর তারা ক্ষমতায় আসবে, তারা সব সময় ষড়যন্ত্র করবেই। আর সেটি চরিতার্থ করতেই দেশে মানুষকে বিপদে ফেলবে। যাদের ব্যক্তিস্বার্থ আর নিজেদের আকাক্সক্ষা আছে তাদের একটি ষড়যন্ত্র ছিলো, আছে, থাকবে। সেই জন্য সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছি। কারণ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ১০ বছরের শাসনামলে দেশের ৬৪ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট। এটা তো আমরা করিনি, আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণার রিপোর্ট। তাহলে অসন্তুষ্ট কারা? আমরা তো দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গঠন করেছি। মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করেছি, তরুণ সমাজকে উন্নত জীবন দিয়েছি। তারপরেও পত্রিকা খুলে দেখি কোথাও এতটুকু এটা হয়নি, ওটা হয়নি, এতেই তাদের আত্মতুষ্টি। কারণ তারা জনগণের জন্য ক্ষমতায় যেতে চায়নি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আজ যে উন্নতি তার সব কিছুর ভিত্তি তো বঙ্গবন্ধু করে দিয়েছেন। স্যাটেলাইট সমুদ্র বিজয় সবকিছুর ভিত্তি কিন্তু তিনিই গড়ে দিয়ে গেছেন মাত্র সাড়ে তিন বছরে। আমরা ২০০৮ সালে যে ইশতেহার দিয়েছি তার সবগুলোই পূরণ করেছি। দিন বদলের সনদ দিয়েছি, সেই দিন বদল কি হয়নি? এখন দেশের প্রত্যেক সেক্টরে উন্নয়নের জোয়ার বইছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাইনোরিটি থেকে আমরাই প্রথম তাঁকে বানিয়েছি প্রধান বিচারপতি। তিনি সেটির সম্মান রাখতে পারেননি। এটি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু তাঁর আপিল ডিভিশনের কয়েকজন সহকর্মী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, তিনি এজলাসে বসলে তাঁরা বসবেন না। সেটি নিয়েই সমস্যা তৈরি। এখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
এস কে সিনহার বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বেশি বললে বলেন বেশি কথা বলি। আর কম কথা বললে বলেন কম কথা বলি। এ পর্যন্তই থাক।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। এস কে সিনহা কেন বিএনপি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছে আমাকে যেন সমর্থন না দেয়, আমি জানি না। আমি কারো সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাই না। আমার সমর্থন জনগণ। সেটি নিয়ে থাকতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনো আমাদের শত্র“ ছিল না। কওমি মাদ্রাসার মান দিয়ে তাদের উপকার করেছি। তাই তাঁরা দোয়া করছে। তাঁরা যদি আ’লীগে যোগ দিলেও সমস্যা নেই বলে থাকে, তাহলে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনাদের শত্র“ হেফাজতের প্রধান আল্লামা শফি বলেছেন, আ’লীগ ছাড়া সবাই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেউ কওমি মাদ্রাসার মান দেওয়ার বিষয়ে বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও সমস্যা নেই।’ এরই জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনো আমাদের শত্র“ ছিল না। বরং তাদেরকে খালেদা জিয়া মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শাপলা চত্বরে নিয়ে আসে। তাদের জন্য গরু জবাই করা হবে বলে রাত পর্যন্ত ধরে রাখা হয়। পরে ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে কলা-রুটি দিয়ে ভয়াবহ পরিবেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আমি তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। কওমি মাদ্রাসার মান দেওয়ার মাধ্যমে তাদের রুটি-রোজগারের একটি ব্যবস্থা হবে। আমরা তাদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্মকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আবার ধর্মকে অপব্যবহার করাও উচিত হবে না। আমি চাই না শাপলা চত্বরের মতো কোনো ভয়াবহ চিত্র দেশে ফিরে আসুক। আমি মনে করি, সেই পরিস্থিতি দেশে আসবে ও না।’