বিএনপি’র মানববন্ধনে পুনরায় নির্বাচনের দাবি

434

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন রাজপথে মানববন্ধনের মাধ্যমে ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন থেকে নেতারা এ দাবি জানান। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে এ মানববন্ধন করলো বিএনপি। উল্লেখ্য, ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও শরিকদের বিজয়ী নেতারা এমপি হিসেবে শপথ নেননি। মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে বলেছি- আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। তখনই আমরা বলেছিলাম, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করতে হবে। আজকে আবার সেই দাবির পুনরাবৃত্তি করছি।

আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে এই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠান করতে হবে। জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের রায় দিতে পারে।

পুনরায় নির্বাচন দেয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা আহ্বান জানাতে চাই- ভোটের অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষার জন্য দলমতনির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান সংসদকে বাতিল করে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠনের আন্দোলন করতে হবে।

আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটি সংসদ বসতে চলছে, যে সংসদ জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব করে না। ৩০শে ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে, তা ছিল ভোট ডাকাতির ভুয়া নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সম্পন্ন ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে আওয়ামী লীগ সংসদে দখলদারির সরকার বসিয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে জন্য নির্বাচনের আগে থেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। মিথ্যা মামলায় তার এক বছর আগে থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। একইভাবে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার সব ষড়যন্ত্র সরকার পাকাপোক্ত করেছে।

মির্জা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঠিক একই কায়দায় জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে আরেকবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্য কায়েম করেছে দখলদারির সংসদ। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২৯শে ডিসেম্বর রাতে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করেছে। এ দেশের জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ৩০শে ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এটি তথাকথিত সংসদ। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে যাইনি। অনেকে সে সময়ে অভিযোগ করেছেন কেন আমরা সেই নির্বাচনে যাইনি।

৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যে যাইনি সে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। শেখ হাসিনার অধীনে যে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না- এটা আজকে প্রমাণিত হয়েছে। সারা বিশ্ব এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর দেশের ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। নির্বাচন করেছে প্রশাসন-পুলিশ। সেখানে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। নির্বাচন যেটা হয়ে গেল, সেই নির্বাচনের বিবরণী আমরা দিতে চাই এবং আমরা দেব। নির্বাচন নিয়ে তথ্যভিত্তিক একটি শ্বেতপত্র বের করা হবে। নির্বাচনের ফলাফলে বিস্ময় প্রকাশ করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরা এই নির্বাচনে হতবাক হয়েছি, অবাক হয়েছি। আমি তো নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম, মুখ দিয়ে কথা বের হয় না। আমাদের কারোরই বের হওয়ার কথা নয়। এরকম আমরা কোনোদিন প্রত্যাশা করিনি, যেটা এবার আমরা দেখলাম।

এই সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, একাদশ সংসদে আজকে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। তারা হচ্ছেন ভুয়া ভোটের প্রতিনিধি। এবার প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় শুধু রিগিংই নয়, তাদের সহায়তায় ভোট সন্ত্রাস হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এবিএম মোশাররফ  হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।

এ ছাড়াও যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এদিকে বেলা ১১টায় মানববন্ধন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও সময় কিছুটা এগিয়ে এনে সাড়ে ১০টায় মানববন্ধন শুরু করেন। মানববন্ধনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা কম। অন্যদিকে মানববন্ধন ঘিরে দাঙ্গা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন সতর্ক অবস্থানে।