জনবল সংকট উত্তরণ হলে খুমেক হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে: এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ

258

আবু দাউদ ইমরান, ডেক্স রিপোর্ট
একসময় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন স্বাস্থ্যনীতির বালাই ছিল না। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ হাসপাতালটিকে পুঁজি করে বাদুরেরমত চুষেচুষে খাচ্ছিল এক শ্রেণীর দালালচক্র। ভাল সেবা দেওয়ার মানসিকতারও অনেকটা অভাব ছিল কতিপয় চিকিৎসকদের মধ্যে। বিভিন্ন কারণে আগত সেবা প্রত্যাশীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছিল। নৈরাজ্য ও দূর্নীতিতে ছেঁয়ে যায় হাসপাতালটি। যেমন, সরকারি ঔষধ চুরি, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, রোগিদের খাবার চুরিসহ বিভিন্ন খাত থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহন করেছিল ওই সবচক্র। অস্বাস্থ্যকর নোংরা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বৃহত্তর এ হাসপাতালটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। তাছাড়া দালাল চক্রের এক অভয়ারণ্য বা নিরাপাদ ঘাঁটি ছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে । প্রকৃত পেশা আর দায়িত্বের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের আখের গোঁছাতে ব্যস্ত থাকতেন অধিকাংশ ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে খবরের কাগজে চলতে থাকে হাসপাতাল সংক্রান্তে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও থেমে ছিল না অনিয়ম-দূর্নীতি।
তথ্যমতে, হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৯ জন তত্ত্বাবধায়কের রদবদল হয়েছে। কিন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দূর্নীতিমুক্ত হয়নি। বিশেষ করে ডাঃ মাহাবুব আলম ফারাজীর আমলেই বেশি ভূঁয়া ইনজুরির সার্টিফিকেট বিতরন হয়েছে যা নিয়ে তিনি সর্বমহলেই বিতর্কিত হয়েছেন। তখনকার সময় এক্স-রে বিভাগ, প্যাথলজি, সিটি স্ক্যানিং, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম সহ জরুরী পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমনকি সরকারি ঔষধ থেকে অনেক মানুষ বঞ্চিত হয়েছিল। তত্তা¡বধায়ক ডাক্তার আনন্দ মোহন সাহা বিদায় হওয়ার পর বর্তমানে হাসপাতালটির একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ গত ২৮ জুন ২০১৭ তারিখে যোগদান করারপর থেকে শক্ত হাতে হাল ধরে দমন করেন হাসপাতালটির দীর্ঘ দিনের চলতে থাকা নানা অনিয়ম-দূর্নীতি। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন । তাছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সহ পূর্বের জমে থাকা স্যাঁতসেতে ও নোংরা আবর্জনা ধুঁয়ে মুছে ফেলা হয়েছে । এখন ইনজুরির সার্টিফিকেট নিয়মের মধ্যে দিতে হচ্ছে। রোগিদের মাঝে সঠিকভাবে ঔষধ বিতরন করা হচ্ছে। প্রতিদিনের খাবারের মানও উন্নত হয়েছে, প্যাথলজি বিভাগ ২৪ ঘন্টা খোলা থাকছে। এছাড়াও অন্যান্য জরুরী বিভাগ গুলো স্বচারু রূপে চলছে। সাবেক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে ৫০০ শয্যা হাসপাতালটির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালের বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ সফলতার পিছনে ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদের নিরন্তর নিরলস পরিশ্রম ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, বর্তমান তত্তা¡বধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছেন । যেমন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক কোড করা, সকল ভর্তি রোগিদের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ভূঁয়া ইনজুরি সার্টিফিকেট বন্ধ করা, হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগ ও আন্তঃবিভাগ সিসি ক্যামেরা আওতাভূক্ত, দালালচক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য ও স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক বার্তাসহ যেসকল সেবা মূলক সার্ভিস দেওয়া হয় তা প্রতিদিন প্রচার মাধ্যমে জানানো, প্রয়োজনীয় বিভাগে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সকল রোগিদের মাঝে শতকরা ৮০ ভাগ ঔষধ সরবরাহ করা, এছাড়াও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি ঝাড়–দার থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত স্বচ্ছ জবাবদিহিতা মূলকভাবে কাজ করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ নতুন সিটি স্কান মেশিন, স্কানো শিশু ওয়ার্ড, ওটি এবং পোস্ট অপারেটিভ কমপ্লেক্স চালু করা হয়। এরআগে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), চক্ষু বিভাগ, বার্ণ ইউনিট , মানসিক বিভাগ, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগিদের জন্য অনকোলজী বিভাগ এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট(আইসিইউ) ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চালু হয়। তবে দক্ষিনবঙ্গের বৃহত্তর এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে এখনও এনজিওগ্রাম, এমআরআই মেশিনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ না দেওয়ার ফলে এ অঞ্চলের মানুষ এখনও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এব্যাপারে কথা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদের সাথে । তিনি বলেন, যোগদানের ৭দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ করা হয়েছে। একসময় মুমূর্ষু রোগীদের জন্য বাইরের থেকে অক্সিজেন ভাড়া করে আনতে হতো, আমি আশার পর সরকারিভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করছি। এছাড়া ঔষধ চোর, খাবার চোর , সার্টিফিকেট বাণিজ্য সিন্ডিকেট সহ বিভিন্ন প্রতারক সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। জনবল সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জনবল ও চাহিদানুযায়ি অর্থবরাদ্দ হলে হাসপাতালটি একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে রুপ নিবে।
প্রকাশ থাকে, ঘুঁেন ধরা প্রকট জনবল ঘাটতির মধ্যে নতুন এক চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলায় অবর্তীণ হন তত্তা¡বধায়ক এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ । শক্তহাতে হাল ধরে কঠোর হস্তে দমন করেন ওই সব দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। স্বল্প কিছু দিনের মধ্যেই দূর্ণামের বোঝা কমিয়ে আনতে অনেক সক্ষম হন তিনি। তাঁর দূরদর্শী ভূমিকায় চিকিৎসা সেবার মানও অনেকটা উন্নত হয়েছে।