অবশেষে ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষা আইনে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি

423

জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ সোমবার দুপুরে এ আইনের বিলে সাক্ষর করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। বিলের ওপর আনীত সংশোধনী, জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
পাস হওয়ার পর থেকেই নানা মহলে এটি নিয়ে উদ্বেগ, বিতর্ক আর সমালোচনা চলছে। আইনটির অনেক ধারায় হয়রানি ও অপব্যবহার হতে পারে বলে গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার-কর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আইনটি পাস হওয়ার প্রতিবাদে সম্পাদকেরা মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে গণমাধ্যমের আপত্তিতে থাকা ধারাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন আইন, তথ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
৩ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধী মন না হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যা আছে:
ধারা ৩২: যদি কোন ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোন সংস্থার গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা হবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির শামিল। আর এটি হবে অজামিন যোগ্য অপরাধ। এমন অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে- কোন ব্যক্তি প্রথমবার এই অপরাধে দোষী সাব্যস্থ হলে অনুর্ধ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা বারবার ওই অপরাধে দোষী প্রমাণীত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ১৭: কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে ভয়ভীতি দেখায় অথবা রাষ্ট্রের ক্ষতি করে, তাহলে তা হবে অজামিনযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে- এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৫: কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমনাত্বক ভয়-ভীতি দেখায় তাহলে তাকে তিন বছরের জেল বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৩: কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করলে, ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৪: কম্পিউচার সিস্টেম ব্যবহার করে প্রতারণা, কাউকে ঠকানোর জন্য অপর কোন ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করা জীবিত বা মৃত অপরের তথ্য নিজের বলে প্রচার করা ডিজিটাল অপরাধের শামিল। প্রথম দফায় এ অপরাধের শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। কোন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৬: আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া অন্য কারও পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রি, সরবরাহ ও ব্যবহার করা হবে অপরাধ। প্রথম দফায় এ অপরাধের শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড। কোন ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৭: নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কেউ রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা, স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা বা জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করলে বা করার চেষ্টা করলে অথবা ইলেকট্রনিক নেটওযার্ক ব্যবহার করে জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও সেবা ক্ষতিগ্রস্থ করলে তা হবে ডিজিটাল অপরাধ। এ ধারার অধীনে কোন অপরাধীর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে- এ অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৮: যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ করে, তাহলে তাকে অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে তাকে অনধিক ১০ বছেরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩০: না জানিয়ে কেউ যদি কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক বীমায় ই-ট্রানজেকশন করে তাহলে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩১: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা বিভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে তা ডিজিটাল অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩৩: কোন ব্যক্তি কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশ করে সরকারি বা আধা সরকারি আর্থিক সংস্থার তথ্য সংযোজন, বিয়োজন বা স্থানান্তর ঘটানোর অপরাধ করলে তার শাস্তি ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয় মেয়াদে করলে তার ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩৪: হ্যাকিংয়ের শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় এ অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
সূত্র : পূর্ব-পশ্চিম বিডি, সূত্র-দৈনিক সময়ের খবর